১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাতে ইউরোপ ভ্রমনের উদ্দেশ্যে যখন ফিনল্যান্ডের হেলসিংকির টুরকু এয়ারপোর্ট থেকে রোমের ফিউমিচিনু এয়ারপোর্ট এ পৌছালাম তখন বিমানে ঘটা যাওয়া অনাকাংখিত ঘটনার জন্য দুজনেই ক্লান্ত ছিলাম। আসলে ব্যাপারটা হয়েছি কি – ৯ই সেপ্টেম্বর থেকে হেলসিংকিতে দেবরের বাসায় উঠার পর দুইদিন ভালই ছিলাম কিন্তু ১১ তারিখ থেকে ঠান্ডা আর জ্বর শুরু হল। আমি আর তারেক খুবই চিন্তায় পড়ে গেলাম এই ভেবে যে ১২ তারিখ রাত থেকেই দুজনের ইউরোপ ট্যুর শুরু। যাহোক কি আর করা সংগে নেয়া ঔষধ খেয়ে কোনমতে জ্বর সারলেও ঠান্ডাটা সহজে গেল না। এর ফলে বিমানে কিছুটা অজ্ঞানের মত হয়ে গিয়েছিলাম। পরে বিমানের ক্রু এবং বিমানে থাকা একজন ডাক্তার তাৎক্ষণিক অক্সিজেন দিয়ে আমাকে ঠিক করলেও আমার স্বামী তারেক কিন্তু ভয় পেয়ে যায়। পরে বিমান ল্যান্ড করলে যাত্রীরা সব নেমে যাওয়ার বেশ কিছু পর সুস্থ বোধ করার পরেই বিমান থেকে নামি। ভাল লেগেছে ভিনদেশী বিমান ক্রুদের ব্যাবহার। একজন ছেলে ক্রু তো আমার হাত তার এক হাতের মাঝখানে রেখে রাজকীয় ভংগিতে বিমানের বাসে উঠিয়ে দিল। এই কান্ড দেখে তারেক মুচকি মুচকি হাসছিল আর আমাদের পেছন পেছন আসছিল।
এদিকে রোমের ফিউমিচিনু এয়ারপোর্ট নেমে আমাদের বিমানে দেয়া বড় লাগেজটা খুজে পাচ্ছিলাম না। এরপর অফিস রুমে লস্ট এন্ড ফাউন্ড ফর্ম পূরন করে দুজনেই এয়ারপোর্ট এর লাউন্জে রাখা সীটগুলোতে মন খারাপ করে বসে ঘুমানোর চেস্টা করছিলাম। উপায় নেই কারন ঐ রাতের জন্য আমরা কোন হোটেল বুক করিনি। আমাদের হোটেলে প্রবেশের সময় সকাল ১০.৩০ এ । তখন রাত বাজে ১টা, লাগেজও পাচ্ছিনা, এদিকে বিমানে এমন ঘটনা ঘটে গেছে,মনটা দুজনেরই ভীষন খারাপ। যাহোক আমাদের মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে বিমানে পরিচয় হওয়া এক সৌদী আরবের ভাই এগিয়ে এসে জিগ্গেস করল কি হয়েছে। কারন বলাতে বলল, ধর্য্য ধারন করতে সব ঠিক হয়ে যাবে আর আল্লাহ যা করেন আমাদের মঙ্গলের জন্য করেন। উনি চলে যাওয়ার প্রায় ১ ঘন্টা পর অফিস থেকে একজন কর্মকর্তা এসে আমাদের হারানো লাগেজটা দিয়ে গেলো। এতে খুশী হলাম এবং মনে মনে কিছুটা বলও পেলাম।
রাত তখন ৪.২০ বাজে। তারেককে বললাম যেহেতু হোটেল বুক করেছ তখন নিশ্চয়ই এটার গেস্টদের বসার জন্য নিচে লাউঞ্জে থাকবে। তাহলে চল আমরা হোটেলে গিয়ে নিচের লাউঞ্জে অপেক্ষা করি। তারেক অবশ্য বলছিল হোটেলের রিসিপসনিস্ট আমাদের ১০.৩০ এ যেতে বলেছে। কিন্তু ওর এ কথায় আমি গুরুত্ব না দিয়ে হোটেলে যাওয়ার জন্য তাড়া দিতে লাগলাম। আমাদের হোটেলটার নাম ছিল লুনা ব্লো এবং এটি রোমের ভিয়া দি সালিচি এলাকায়। যেহেতু আমি একটু অসুস্থ তাই ও কথা বাড়াল না আমার কথাই মেনে নিল। ইতালির ট্যাক্সি ক্যাবগুলোর সমস্যা হল এরা ইংরেজি বুঝে না আর ইংরেজি বললেও চিটাগাং সিলেটিদের মত ইংলিশ বলে যা আমরা বুঝিনা। যাহোক জিপি ম্যাপ এ হোটেল লোকেশন ইন্ডিকেট করতেই এটা শহরের বাহিরে বিধায় ভাড়া ৭০ ইউরো চাইল কিন্তু নিয়ম হচ্ছে শহরের ভিতর ৫০ ইউরোর বেশী ভাড়া চার্জ করা নিষেধ। অগ্যাত একটা উবার ঠিক করলাম মিটারে যা আসে তাই দিব। যাহোক শেষে গন্তব্য পৌঁছে মনে হয় ৬০ না ৬২ ইউরো ভাড়া উঠেছিল তা সঠিক মনে নেই। কিন্তু বিপত্তি ঘটল হোটেলের সামনে এসে। কোথায় হোটেল আর এর লবি। ২ তলা বাসা। এয়ার বি এন বি করে হোটেল হিসাবে ভাড়া দিয়েছে আর গেট খুব সিকিউরভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন কি করা, তখন রাত ৫.২০ মিনিট, চারিদিক অন্ধকার। ঐ অবস্থায় রিসিপসনিস্টকে মেসেজ করলাম ফোন করলাম কিন্তু কোন সাড়াশব্দ নেই। গেটে বসে আছি দুজন ব্যাগ ব্যাগেজ নিয়ে। এমন অবস্থা যে কেউ এসে ছুরি বা বন্ধুক দেখিয়ে টাকা পয়সা সহজে নিয়ে যেতে পারবে। এদিকে তারেক আমার দিকে কটমটিয়ে চাচ্ছে আর মৃদু বকাঝকা করছে কেন আমি এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করলাম না। আমিও একটু অপরাধবোধে ভুগছিলাম এই সিচুয়েশন তৈরি করার জন্য।
অনেকক্ষন ধরেই গুটিসুটি মেরেই দুজনে গেটের কাছে বসে রইলাম যাতে কেউ দেখতে না পায়। অবশেষে বেলা ৭.০০টায় যখন সূর্য উঠল তারেককে বললাম চল কোন রেস্টুরেন্ট খুঁজে সকালের নাস্তা করি। কালকের পর থেকে আসলেই কিছু খাওয়া হয়নি। সে অনুযায়ী রাস্তা দিয়ে হাঁটতে লাগলাম। হাঁটতে হাঁটতে খেয়াল করলাম চারপাশে তিনতলা চারতলা বহু বাড়িঘর আর রাস্তার দু’পাশে অনেক গাড়ি পার্ক করা। এর মধ্যে দুই সিটের ছোট গাড়িগুলো আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। পরবর্তীতে জেনেছিলাম এই গাড়িগুলো ওরা তৈরি করে পার্কিং এর অসুবিধার জন্য। ছোট হওয়াতে জায়গা কম লাগে তাই রাখতে সুবিধা। যাহোক রাস্তায় একজনকে জিজ্ঞেস করাতে একটা ক্যাফে দেখিয়ে দিল। অসুস্থতার ক্লান্তি নিয়ে ক্যাফেতে ঢুকতেই দেখলাম ছোট করে চুলকাটা থুতনির কাছে ছোট করে দাড়ি রাখা ক্যাফের ছেলেটি ইতালিয় ভাষায় কাস্টমারের সাথে কথা বলছে আর কফি সার্ভ করছে। তাকে ইংরেজীতে বললাম নাস্তা হবে, সে ইতালিয় স্ন্যাক্সগুলো দেখিয়ে দিয়ে বলল হবে । আমি তারেককে বাংলায় বললাম তুমি কি খাবে? এ কথা শোনার সাথে সাথে ছেলেটি স্পষ্ট বাংলা ভাষায় বলে উঠল আপনারা কি বাংলাদেশী? এ কথা শোনার পর আমি মাথায় হাত দিয়ে বললাম ও মাই গড আপনি বাংলাদেশী। সে মাথা নেড়ে বলল হ্যাঁ সে বাংলাদেশী। ঐ মুহূর্তে আমার মনে হল আমি এক টুকরো বাংলাদেশকে পেয়েছি, এখন আমাদের আর কোন চিন্তা নেই। ওর নাম ফাহিম। ও প্রায় ১৪-১৫ বছর হয় ইতালিতে আছে আর ক্যাফেটা ওর নিজের সাথে একজন বাংলাদেশী কর্মচারী আছে। আমাদের পরিচয় দিলাম এবং এখানে আসা অবধি কি কি হল সবাই বললাম। শুনে ও আমাদের বলল চিন্তা করবেন না আপা বসেন আর এখানে আপনাদের লাগেজগুলি রেখে নিশ্চিন্তমনে ভ্রমন স্পটগুলোতে ঘুরে আসতে পারবেন। পরবর্তীতে কথায় কথায় আরো জানতে পারলাম সে আমাদের বিমান বাহিনীর কর্মকর্তার সন্তান, ক্যান্টনমেন্ট এলাকা সৌদি কলোনিতে ছিল ও বি এফ শাহিন স্কুল ঢাকার ছাত্র। ফাহিম যখন জানল আমরাও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তার সন্তান তখন ও খুব খুশী হয়ে গেল, মনে হল অনেকদিন পর কোন আত্নীয় খুঁজে পেল। আমাদের বসিয়ে প্যাঠিস টাইপের কিন্তু মিষ্টি একটা স্ন্যাক্স (Bar Tabacchi Cirillo) ও কফি খাওয়াল। কাজের ফাঁকে অনেক গল্প চলছিল আর এই ফাঁকে আমাদেরকে ফাহিম গাইড করছিল কোন স্পটে কিভাবে যেতে হবে। খেয়াল করলাম অনেক ইতালিয়দের পাশাপাশি অনেক বাংলাদেশী এসেও এখানে বিভিন্ন রকমের স্ন্যাক্স ও ছোট একটা গ্লাসে কড়া কফি খাচ্ছে যাতে ওদের কাজের সময় ঘুম না আসে। কোন কোন ইতালিয় মদের বোতল হাতে নিয়ে খেতে খেতে আয়েশী ভংগীতে কাজে চলে যাচ্ছে। নাস্তা শেষে যেই বিল দিতে যাব সে আর নিবে না বলল আপনি বড় আপা বিল নেব না। পরবর্তীতে যতদিন ক্যাফেতে খেয়েছি সে একদিনও খাবারের মূল্য রাখেনি। এমনকি ১ম দিন তার পরিচিত বাংলাদেশী জিয়া ভাইয়ের গাড়িতে করে কলোসিয়াম পর্যন্ত আমাদের পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছিল। ধন্যবাদ ছোট ভাই ফাহিম সুদূর রোম শহরে তোমার মত এক টুকরো বাংলাদেশকে পেয়ে মনের ভিতর যে বল পেয়েছিলাম তার ভাষা প্রকাশ করার মত নয়। তোমাকে আন্তরিক স্নেহ ও ভালবাসা।
ফাহিম অবশ্য বলছিল ভিক্টোরিয়া বা তেরমিনিতে গেলে প্রচুর বাংলাদেশী রেস্টুরেন্টে পাবেন, সেখান থেকে খেয়ে আসেন তাহলে ভাল হবে। প্রথমদিন খুব টায়ার্ড থাকাতে আর বাস, ট্রাম ও মেট্রো এর কঠিন চক্রতে পড়ে ওই জায়গাগুলোতে না গিয়ে হোটেল থেকে একটু দূরে ট্যাক্সি ক্যাবে করে একটা রেস্টুরেন্ট এ খেতে গিয়েছিলাম। সিলেটি বাংলাদেশী হোটেল কিন্তু খাবারটা খুব ভাল লাগেনি। তাই ২য় দিন স্পটগুলো দেখার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে ট্যাক্সি ক্যাব নিয়ে সরাসরি হোটেলে চলে আসি। দুপুরের খাবার সেরে ছিলাম ঐখানে বিখ্যাত ভেজিটেবল পিৎজা, গেলাটো আইসক্রিম, জুস খেয়ে। তবে বিখ্যাত জিনিস খেয়ে আমার খুব একটা ভাল লাগেনি। হতে পারে ঠান্ডা লাগার কারনে মুখে মজা পাইনি আর না হয় আমি পরোপুরি মাছে ভাতে বাংগালী । গোসল করে একটু রেস্ট নিয়ে বিকালের দিকে মনে হল কিছু খেতে হবে তাই তারেককে বললাম চল বের হয়ে দেখি কাছে ধারে ভারতীয়/ বাংলাদেশী কোন রেস্টুরেন্ট পাওয়া যায় নাকি। ঐ মুহূর্তে মনে হচ্ছিল আহা গরম ভাত ডিম ভাজা আর কাচামরিচ পেলে যেন স্বর্গের খাবার পেতাম। ফাহিম অবশ্য বলেছিল কাছে একটা ভারতীয় রেস্টুরেন্ট আছে তবে খাবারগুলো খুব ভাল নয়। আসলে পেটে খিদে থাকলে ভালোমন্দ দেখার উপায় নেই। হাঁটতে হাঁটতে দেখলাম সামনে একটা স্টেশনারী টাইপের মুদি দোকন সেখানে ফলমূল থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই আছে। দোকানটি বাংলাদেশের শরীয়তপুরের দাদা সুমন দাসের। উনি এবং উনার ভাইগ্না এই দোকানটি চালান। দাদাকে বললাম আমরা আসলে খাবারের জন্য রেস্টুরেন্ট খুঁজছি। দাদা বলল এখানে ভাল খাবার দোকান পাবেন না। অগ্যাত বাংলাদেশী দাদা পেয়ে আবদারের সুরেই বললাম যে, এই দোকান থেকে এক হালি ডিম ও চাল কিনে দিলে দাদা আমাদের একটু রান্না করে দিতে পারবেন কিনা। এ কথা শুনে দাদা স্মিত হেসে বলল রাত সাতটার সময় আসতে। এর মধ্যে সুমন দাদার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম উনি অনেকদিন ধরে ইতালিতে আছেন, সামনে ফ্যামেলীকে নিয়ে আসবেন। আসার সময় আপেল, আংগুর,কলা, পিচ জাতীয় দুই ধরনের ফল দিয়ে দিলেন কিন্তু জোর করেও টাকা দিতে পারলাম না। আমি অসুস্থ থাকাতে হোটেল রুমেই ছিলাম। তারেক রাত সাতটায় সুমন দাস দাদার দোকানে গিয়েছে খাবার আনতে। আসার পরে দেখলাম সে এক মহাকান্ড। ২ প্যাকেট ভাত, ১ প্যাকেট সালাদ, ২টি ডিম ভাজা, ২টি ডিম সেদ্ধ, সবজি ডাল আর করল্লা ভাজি পেয়ে চোখে পানি চলে আসল। তারেক দাদাকে অনেক চেস্টা করেও টাকা দিতে পারেনি, আমিও মনে মনে ভেবেছিলাম ওনি হয়তো টাকা নেবে না। দাদার দেয়া খাবার আমরা রাতে ও পরের দিন সকালে খেয়েছিলাম। ধন্যবাদ দাদা আপনার অতিথেয়তায় যেখানে মায়া মমতায় ভরা এক টুকরো বাংলাদেশকে আমি খুঁজে পেয়েছিলাম।
রোমের ৩য় দিন ভেটিকেন সিটি দেখে দুপুরে ফেরার সময় চিন্তা করলাম আজ যেহেতু শেষ দিন এবং রাতে বাসে জুরিখে যাওয়ার একটা লম্বা সফর আছে তাই একটু ভাল করে খাওয়া দাওয়া করতে হবে। সে অনুযায়ী রাস্তায় বাংগালী ভাইদের জিগ্গেস করতে করতে তেরমিনিতে গিয়ে পৌছালাম। তেরমিনিতে আসলে ট্রেন, বাস, ট্রামের মূল স্টপেজ। ওখানে এসে একজনকে জিগ্গেস করতেই সে একটি ইনডিয়ান রেস্টুরেন্ট দেখিয়ে দিল। রেস্টুরেন্টে ঢুকতেই পরিচিতে একজনের সাথে তারেকের চোখাচোখি হতেই উনি বলে উঠলেন আরে তারেক ভাই আপনি। উনার নাম খসরু এবং এই হোটেলের মালিক। ব্যাপারটা হয়েছে কি উনি আমার হাজব্যান্ডের অফিসের এক কলিগের ছোট ভাই। কলিগ তারেককে তার ভাইয়ের নম্বরটা দিয়ে বড় মুখ করে বলেছিল যে রোমে আমার ভাই আপনাকে সব ধরনের হেল্প করবে। আমরাও একটু ভরসা পেয়েছিলাম যেহেতু উনি আমাদের অনেক পছন্দের একজন মানুষ এবং আমার ট্র্যাভেল এজেন্সির মাধ্যমে উনি বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমনও করেছেন। যাহোক তারেক খসরু ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করল এবং আমাদের জন্য একটা ভাল এবং কম প্রাইজের হোটেল দেখে দিতে বলল। উনিও আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু আর রেসপন্স করেননি। এদিকে আমাদের ভ্রমনের সময় চলে আসছে তাই বাধ্য হয়ে নিজেরাই অনলাইন থেকে হোটেল বুক করলাম। ইউরোপে যাওয়ার পর এমনকি রোমে ২ দিন থাকার পরও উনি আমাদের কোন খোজও নেননি। কিন্তু রোমের ৩য় দিন অবশ্য আমাদের ফোন দিয়ে খবর নিয়েছেন এবং উনার ওখানে যেতে বললেন। আমরা আসলে কিছুটা অভিমান করেই উনার ওখানে যাইনি। ভাগ্যের কি পরিহাস ঘুরতে ঘুরতে খসরু ভাইয়ের রেস্টুরেন্টে এসে হাজির হলাম। উনি আমাদের পেয়ে খুবই খুশি হলেন আর কি খাবো না খাবো তা নিয়ে অস্থির হয়ে গেলেন। আমি আসলে কোন খাবারে কোন স্বাদই পাচিছলাম না। তাই বললাম ডিম ভাজি আর ডাল খাব। খসরু ভাই তার সাথে এক বাটি খাসির মাংস ও সালাদ দিলেন। তৃপ্তি নিয়ে খেয়ে টাকা দিতে চাইলে খসরু ভাই টাকা তো রাখলেন না বরং ব্যস্ততার কারনে আমাদের কোন হেল্প করতে পারেননি বলে সরি বলতে লাগলেন। উনার অতিথেয়তায় মনের ভিতর পুষে রাখা অভিমান কিছুটা কমে গেল। তারপর উনি বলে দিলেন আমরা কোন ট্রামে আমাদের গন্তব্য স্থানে যাব।
রোমকে আরেকটি কারনেও আমি এক টুকরো বাংলাদেশ বলব। পথে, বাসে, ট্রামে, মেট্রো, মার্কেট এবং পুরা রোম জুড়েই যেখানে যাবেন সেখানে বাংগালী ভর্তি। কেউ হয়তো ক্যাফে, সুবিনিয়রের দোকান, ফলের দোকান, স্টেশনারী মুদি দোকান, টুরিস্ট বাস হিপহপের এজেন্ট, ট্যাক্সি ক্যাবের ড্রাইভার, খাবারের দোকানে এবং বিভিন্ন সেকটরে কাজ করছে। কেউ কেউ আবার বাংলাদেশের মত রাস্তায় রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের কাপড় এবং ২ ইউরো করে পানিও বিক্রি করছে। আমরা যতদিন ছিলাম অন্য কোন বিদেশীকে জিগ্গেস করতে হয়নি কোন জায়গায় কিভাবে যাব। কনফিউশন অনুভব করলেই পথে দাড়িয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে একজন না একজন বাংগালী পেয়ে যেতাম। একদিকে গর্ব অনুভব করেছি এরা আমাদের দেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধা অন্যদিকে কস্ট অনুভব করেছি এই ভেবে যে বিদেশ বিভুয়ে তারা অমানসিক কস্ট করে দেশের আত্নীয় পরিজনের কাছে যে টাকা পাঠায় তার কতটুকু মূল্যায়ন তারা পায় তাই ভেবে। ভাল লেগেছে রোমে এক টুকরো বাংলাদেশ ও তাদের ভালবাসা দেখে।
লুৎফাতুন নেছা
১২.১০.২০২৩